September 28, 2024, 8:16 pm

সংবাদ শিরোনাম
মজলুম সাংবাদিক নেতা রুহুল আমিন গাজী’র রুহের মাগফিরাতে দোয়া অনুষ্ঠান বৈষম্যের পদভারে পিষ্ঠ নাটোরের প্রাণ এ্যাগ্রো এবং পাঁচ দিনের জন্য বন্ধ ঘোষনা সাবেক পৌর মেয়র মোঃ আলমগীর শেখ তিতু’কে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১০ দিনাজপুরে দুই ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে যুবক নিহত, আহত ৪ সিএনজি সহ চার ছিনতাইকারী জনতার হাতে আটক, পালিয়ে যাওয়ার সময় গাইবান্ধার সাদুল্লাপুরে গলায় রশি পেচিয়ে বৃদ্ধ মহিলার আত্মহত্যা ময়মনসিংহে ১৬৬ বস্তা জিরা ও ৩০০ পিস ভারতীয় কম্বল জব্দ, আটক ৪ চিলমারীতে সেই শিক্ষক সাময়িক বরখাস্ত হবিগঞ্জের নবীগঞ্জে হত্যা মামলার পলাতক আসামীকে কুমিল্লার ময়নামতি থেকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব বাগআঁচড়া-নাভারণ সড়কের বেহাল দশা,দেখার কি কেউ নেই?

সোহরাওয়ার্দীতে যাজকদের অভিষেক ও মুক্ত উপাসনায় পোপ ফ্রান্সিস

সোহরাওয়ার্দীতে যাজকদের অভিষেক ও মুক্ত উপাসনায় পোপ ফ্রান্সিস

ডিটেকটিভ নিউজ ডেস্ক

ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের প্রধান ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিসের পৌরহিত্যে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত হয়েছে মুক্ত উপাসনা ও যাজকদের অভিষেক অনুষ্ঠান; যাতে অংশ নেন বাংলাদেশে প্রায় আশি হাজার খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী। গতকাল শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে আড়াই ঘণ্টার এই মুক্ত উপাসনায় বাংলাদেশের মানুষ এবং বিশ্বের শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনায় প্রার্থনা করেন পোপ। বক্তৃতা দেন যিশুর অনুসারীদের উদ্দেশ্যে।

গত ৩০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশে কোনো পোপের এটাই প্রথম সফরে। সর্বশেষ সফর করেছিলেন পোপ দ্বিতীয় জন পল, ১৯৮৬ সালে। বাংলাদেশে আসার আগে মিয়ানমারেও একই ধরনের প্রার্থনাসভায় পৌরহিত্য করেন পোপ। সেখানে তিনি সবাইকে শান্তির পথে আসার আহ্বান জানান। পোপের আগমন উপলক্ষে সকাল থেকেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ঘিরে ব্যাপক নিরাপত্তা নেওয়া হয়। অনুষ্ঠান সাড়ে ৯টায় শুরু হলেও খ্রিস্টান ধর্মের অনুসারীরা উদ্যানে জড়ো হতে শুরু করেন ভোর ছয়টা থেকে। বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও কূটনীতিকরাও প্রার্থনাসভায় যোগ দিতে আসেন। গলায় কার্ড ঝুলিয়ে প্রার্থনাসভায় যোগ দিতে আসা নানা বয়সী মানুষের চোখে মুখে ভক্তির সঙ্গে মিশে ছিল উচ্ছ্বাস। তাদের কাছে পোপ হলেন ঈশ্বরপুত্র যিশুর প্রতিনিধি। সকাল ৯টা ৪০ মিনিটে পোপ অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছানোর পরপরই শুরু হয় উপাসনা অনুষ্ঠান।

ঈশ্বর বন্দনায় ‘এসো তার মন্দিরে করি স্তবগান একসাথে দলে দলে হয়ে এক প্রাণ..,’ প্রার্থনা সংগীতে শুরু হয় এ অনুষ্ঠান। উপাসনা সংগীতের মধ্যেই সকাল ১০টায় মঞ্চে ওঠেন পোপ ফ্রান্সিস। বিভিন্ন খ্রিষ্টীয় আচারে চলতে থাকে অনুষ্ঠান। ষোল জন ‘ঈশ্বরসেবককে’ যাজক হিসেবে অভিষিক্ত করার আগে উপসনায় আগতদের উদ্দেশ্য সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন পোপ। তার স্প্যানিশ ভাষার বক্তব্য বাংলায় তর্জমা করে শোনানো হয়। পোপ বলেন, প্রিয়জনেরা, আজকের এই শুভ দিনে, যাজকীয় অভিষেক অনুষ্ঠানে আপনারা সবাই এসেছেন, আপনাদের শুভেচ্ছা জানাই। আমি জানি, আপনারা অনেকে অনেক দূর থেকে এসেছেন, অনেকে দুই দিনের যাত্রাপথ অতিক্রম করে এখানে এসেছেন, আপনাদের এ উদারতার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাই। এটা প্রকাশ করে মঙ্গলের জন্য আপনাদের সকলের অন্তুরে অনেক ভালবাসা রয়েছে। এটা প্রকাশ করে যিশু খ্রিস্টের জন্য আপনাদের অনেক অনেক ভালবাসা রয়েছে।

খ্রিস্টীয় চার্চের এই প্রধান পুরোহিত বাংলাদেশে যিশুর অনুসারীদের উদ্দেশে বলেন, এভাবে সামনের পথে এগিয়ে যান, পর্বতের উপর যিশুর অস্টকল্যাণ বাণীর আলোকে, সেই প্রেরণা নিয়ে। আজকে সকলের কাছে আমার বিশেষ আহ্বান, এই নব অভিষিক্ত যাজকদের জন্য প্রার্থনা করতে। অভিষেকের আচার চলার ফাঁকে ফঁকেই চলতে থাকে ধর্মসংগীত ও প্রার্থনা। অনুষ্ঠান শেষ হয় মা মারিয়ার বন্দনা গীতে। এদিকে, খোদ পোপ ফ্রান্সিসের পৌরহিত্যে মুক্ত উপাসনায় অংশ নিতে এসে উচ্ছ্বাসের কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশের ক্যাথলিক খ্রিস্টানরা।

ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গতকাল শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে আড়াই ঘণ্টার এই মুক্ত উপাসনায় অংশ নেয় বাংলাদেশের প্রায় আশি হাজার ক্যাথলিক। পোপের আগমন উপলক্ষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ঘিরে নেওয়া ব্যাপক নিরাপত্তার মধ্যে সকাল সাড়ে ৯টায় মুক্ত উপাসনা ও যাজকদের অভিষেক অনুষ্ঠান শুরু হলেও ভক্তরা অনুষ্ঠানস্থলে জড়ো হতে শুরু করেন সকাল ৬টার আগে থেকেই। এ আয়োজনের স্বেচ্ছাসেবক প্রান্ত মার্টিন ক্রুশ বলেন, সকাল ৬টার পর উদ্যানের ছয়টি ফটক খুলে দেওয়া হয়। সবাইকে ঢুকতে দেওয়া হয় সকাল ১০টা পর্যন্ত। সারা বাংলাদেশ থেকে মানুষ এসেছে। একজন একজন ঢুকতে দেওয়া হয়েছে। প্রার্থনা সভায় যোগ দিতে আগ্রহী খ্রিস্টানরা আগেই নিবন্ধন করেছিলেন। সেই কার্ড দেখিয়েই উদ্যানে ঢুকতে হয়েছে সবাইকে। পোপ দর্শনে এসে তাদের মধ্যে ছিল দারুণ উচ্ছ্বাস। রাজশাহী থেকে ‘মুক্তিদাতা জুনিয়র হাই স্কুলের’ ৫২ জন প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীকে নিয়ে এসেছিলেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক মেবেল রোজারিও। তিনি বলেন, পোপের বাংলাদেশে আগমনে আমরা সবাই গর্বিত, আনন্দিত। কে কোন ধর্মের সেটা দেখার বিষয় নয়, আমরা সবাই ¯্রষ্টার সৃষ্টি। উনি বাংলাদেশে শান্তির বাণী, মানবতার বার্তা নিয়ে এসেছেন।

তিনি শুধু ১৩০ কোটি ক্যাথলিকদের জন্যই নয়, তিনি সকল ধর্মের, সকল মানুষের। উপাসনায় এসেছিলেন দক্ষিণ কাফরুল এলাকার রিবন ফ্লাওয়ার স্কুলের শিক্ষিকা চম্পা রিতা সরকার। তার সঙ্গে ছিল তার স্কুলের ২০ জন শিক্ষার্থী। চম্পা বলেন, পোপ ফ্রান্সিস এসেছেন, উনি আমাদের প্রভু। সকলের মঙ্গল কামনাই আজকে এখানে আসার উদ্দেশ্য। রোমান ক্যাথলিকদের প্রধান ধর্মগুরুকে বাংলাদেশে পেয়ে তার আশীর্বাদ নিতে স্ত্রী-সন্তানদের সঙ্গে নিয়ে রাজধানীর ফার্মগেট এলাকা থেকে এসেছিলেন সুনীল রোজারিও। তিনি বলেন, প্রভু আমাদের দেশে এসেছেন, আমরা আনন্দিত। আমরা তাকে দেখতে এসেছি, তার আশীর্বাদ নিতে এসেছি।

সাভার থেকে আসা জনি হিউবার্ট গোমেজ জানান, সাভারের ‘সাধু জোসেফ গির্জার’ আশপাশের এলাকার খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীরা মিলে ২৫টি গাড়িতে করে তারা উপাসনায় এসেছেন। তিনি বলেন, আমাদের বহুদিনের প্রতীক্ষা ছিল। বহু বছরের পর আজ আমরা প্রভুকে দেখতে পাব। সেজন্য আমরা আনন্দিত। তিনি শান্তির বার্তা নিয়ে বাংলাদেশে এসেছেন। পরিবার নিয়ে গাজীপুরের কালিগঞ্জ চার্চ থেকে আসা রিকন রোজারিও বলেন, পোপের দেখা পাব, এর জন্য সারারাত অপেক্ষায় ছিলাম। ভোর ৪টায় চার্চ থেকে প্রায় ১৩টা গাড়ি করে রওনা করে ঢাকায় পৌঁছাই। পোপকে দেখতে পেরেছি, এটাই আনন্দের। তিন দিনের সফরে গত বৃহস্পতিবার বিকালে মিয়ানমার ঢাকা পৌঁছান পোপ ফ্রান্সিস। বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। বিমানবন্দর থেকে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে গিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন পোপ।

পরে ধানম-িতে গিয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতিবিজড়িত বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করেন। বঙ্গবন্ধু জাদুঘর থেকে বঙ্গভবনে যান পোপ, সেখানে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সঙ্গে একান্ত বৈঠক করেন। পরে বঙ্গভবনের দরবার হলে মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও কূটনীতিকদের উপস্থিতিতে এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। সমাবেশের পর দুপুরে ঢাকায় ভ্যাটিকান দূতাবাসে পোপের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। বিকালে তিনি যান কাকরাইলের রমনা ক্যাথেড্রালে, সেখানে আর্চবিশপ হাউজে বিশপদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। শান্তি কামনায় আন্তঃধর্মীয় ও সম্প্রদায়গত ঐক্য বিষয়ক সভায় অংশ নেন।

সফরের শেষ দিন আজ শনিবার সকালে তেজগাঁওয়ে মাদার টেরিজা হাউজ পরিদর্শনে যাবেন পোপ। এরপর তেজগাঁও হলি রোজারিও চার্চে খ্রিস্টান যাজক, ধর্মগুরু ও ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে চার্চের কবরস্থান পরিদর্শন করবেন। দুপুরের পর ঢাকায় নটরডেম কলেজে তরুণদের সঙ্গে মতবিনিময়ও করবেন। সফরের ইতি টেনে বিকাল ৫টায় শাহজালাল বিমানবন্দর ছাড়বেন ক্যাথলিক ধর্মগুরু।

তাকে বিদায় জানাবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। ২০১৩ সালের ১৩ মার্চ ভ্যাটিকানের ২৬৬তম পোপ নির্বাচিত হন ফ্রান্সিস। রোমের বিশপ হিসেবে তিনি বিশ্বব্যাপী ক্যাথলিক চার্চ এবং সার্বভৌম ভ্যাটিকান সিটির প্রধান। পোপ ফ্রান্সিসের জন্ম ১৯৩৬ সালের ১৭ ডিসেম্বর আর্জেন্টিনার বুয়েনস আইরেসে। ক্যাথলিক পুরোহিত হিসেবে তার অভিষেক হয় ১৯৬৯ সালে। পুরো আমেরিকা অঞ্চল এবং দক্ষিণ গোলার্ধ থেকে নির্বাচিত প্রথম পোপ তিনি।

Share Button

     এ জাতীয় আরো খবর